একটু যত্নশীল হলেই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিরা হয়ে উঠতে পারে দক্ষ মানবসম্পদ। কিছু উপায় অবলম্বন করলে তারাও অন্যান্য স্বাভাবিক শিশুদের মতো পড়াশোনা করতে পারে। এক্ষেত্রে যে উপায়গুলো অবলম্বন করতে হবে তা হলো:- বিদ্যালয়ে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের প্রথম সারিতে বসানোর ব্যবস্থা করতে হবে, সহজ-সরল ও সাবলীল ভাষায় পাঠদান করতে হবে, প্রয়োজনে কথার পুনরাবৃত্তি করতে হবে এবং বোর্ডে লেখার সময় স্পষ্ট ও বড় করে লিখতে হবে, পাঠদানের সময় শারীরিক অঙ্গভঙ্গির ব্যবহার করতে হবে, চলাচলে সমস্যা সম্পন্ন শিক্ষার্থী কোনো শ্রেণিতে থাকলে সে শ্রেণিকে অবশ্যই নিচতলায় রাখতে হবে, সবসময় কৃতকার্য হবার জন্য প্রশংসা করতে হবে। এতে করে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুরা পড়তে আগ্রহী হবে। রেডিও সৈকতের তারার আলো অনুষ্ঠানের জন্য আমরা গিয়েছিলাম খুরুশকুল উপজেলার টাইমবাজার এলাকায়। সেখানে আমরা দেখা করি দৃষ্টিহীন একজন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন নারীর সাথে। তার নাম বিউটি দে। জন্মের পর থেকেই তার খিঁচুনি হতো। জন্মের দেড় বছর পর থেকেই তিনি দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। শুরুতে গ্রাম্য ডাক্তার ও বৈদ্য দিয়ে তার চিকিৎসা চালানো হয়েছে। পরবর্তীতে কক্সবাজার বায়তুশশরফ চক্ষু হাসপাতাল , চটগ্রাম পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতাল সহ দেশের ভালো ভালো চক্ষু হাসপাতাল গুলোতে বিউটিকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। স্বল্পতম আর্থিক সামর্থ্যরে মধ্যেও বিউটির পরিবার তার চিকিৎসার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ভাগ্য বিউটির সহায় ছিলো না। ডাক্তার জানান , বিউটির চোখের নার্ভ শুকিয়ে গেছে। তিনি তার দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। আস্তে আস্তে বিউটি বড় হতে শুরু করেন অন্ধত্বকে সাথে নিয়ে। বিউটির অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের সহযোগিতায় বিউটি প্রাথমিক ও মাধ্যামিক স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। তবে তার শিক্ষা অর্জনের পথটা সহজ ছিলো না। সহপাঠি এবং শিক্ষকদের নিকট থেকে নানা রকম বৈষম্যের শিকার হয়েছিলেন বিউটি । তবে নিজ পরিবার তাকে সহায়তা করে গিয়েছে অসাধারণভাবে। তারা কথনও বিউটির প্রতি কোনোরকম বৈষম্য প্রদর্শন করেনি। বিউটির মধ্যে আছে প্রতিভা ও দক্ষতা । বিউটির স্বপ্ন ছিলো বড় হয়ে তিনি একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক হবেন। কিন্তু করোনাকালীন সময়ে স্কুল বন্ধ থাকার কারণে তার পড়াশোনায় স্বপ্ন একেবারেই নিভে যায়। ২০২০ সালে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলে তার সুস্থতার কথা চিন্তা করে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে তিনি বাসায় পরিবারের সাথে আছেন। তিনি ঘরের প্রতিটি কাজ নিজে করতে পারেন সুনিপুণভাবে। রান্নাসহ পরিবারের সদস্যদের দেখাশোনার দায়িত্বও তিনি পালন করেন। তিনি অত্যন্ত সুন্দর গান করেন হারমোনিয়ামে। একজন দৃষ্টিহীন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন নারীর এমন প্রতিভা সত্যিই অবিশ্বাস্য ও বিরল। এভাবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তর করা সম্ভব। যোগ্যতার মাপকাঠিতেও এগিয়ে যাক বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ এই কামনা থাকবে রেডিও সৈকতের ।