হাজারো বাঁধা নিষেধের দেয়াল ভেঙে ঝড় ঝঞ্ঝা পাড়ি দিয়ে শাসন বারণের পাহাড় ডিঙিয়ে অপমান ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, নিপীড়ণ নির্যাতনকে তুচ্ছ করে নারীরা অদম্য শক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রীতিলতা অনুষ্ঠানের জন্য রেডিও সৈকতের পক্ষ হতে আমরা গিয়েছিলাম কক্সবাজার জেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের সোনাইছড়ি গ্রামে। কথা বলি পারিবারিক সহিংসতার শিকার একজন নারীর সাথে। তার নাম জোবায়দা আক্তার। নবম শ্রেনী পর্যন্ত তার পড়ালেখার সুযোগ হলেও দরিদ্রতার কারনে দশম শ্রেনীতে তার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায় এবং মাত্র ১৪ বছর বয়সে তাকে বাল্যবিবাহ দিয়ে দেয়া হয়। সদ্য নব বধূ রুপে তিনি এমন একটা শ^শুর বাড়িতে গেলেন যেখানে হাজারো প্রতিকূলতা তার জন্য অপেক্ষা করছিলো। যৌতুক দিতে না পারা, রান্না করতে না জানা সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শাশুড়ি মানসিকভাবে হেনস্তা করতো তাকে। এই সমস্ত কথা স্বামীকে বললে প্রতিবারই মার খেতেন তিনি। কখনও কখনও শাশুড়ি ঝগড়ার জের ধরে তার ভাতে বালি পর্যন্ত ঢেলে দিতেন। দিনের পর দিন তার কেটেছে অর্ধাহারে। তার এই কষ্টের সংসারে তার কোল আলো করে এসেছিলো এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তান । কিন্তু ভাগ্য বিধাতা যেন ছিলো তার প্রতি বিমুখ। হঠাৎ লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়ে তার স্বামী মারা যায়। এবার শুরু হলো একা একজন মায়ের যেন বেঁচে থাকার জীবনযুদ্ধের লড়াই। তার পূর্বে ও স্কুল শিক্ষকদের পরার্মশে তিনি আবারও পড়ালেখা শুরু করলেন। দ্বার থেকে দ্বারে তিনি একটি চাকরির জন্য ঘুরেছেন কারন সদ্য পিতা হারা দুই সন্তানের ভরনপোষনের সমস্ত দায়িত্ব ছিলো তার কাঁধে। তার অদম্য ইচ্ছেশক্তির দিয়ে একে একে কাজ করেছেন ব্র্যাক, মুক্তিসহ আরো অনেক স্থানীয় প্রকল্পে, তিনি কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের একটি প্রকল্পেও কাজ করেছিলেন। কর্মদক্ষতায় তিনি ছিলেন অন্যদের চেয়ে এগিয়ে। ঘরে অবসরে তিনি কবুতর এবং দেশী মুরগি পালন করতেন। তিনি তার নিজের উপার্জনে একটি ঘর তৈরী করেছেন। তার সন্তানরা স্কুলে পড়ালেখা করে। সেই তীব্র দারিদ্য-ক্ষুধার কষ্ট আর নেই। সমস্ত বাধা প্রতিকূলতা সরিয়ে জীবন যুদ্ধে তিনি একজন সফল নারী। তার এই অদম্য মনোবলকে আমরা সম্মান জানাই। প্রতিটি নারী যেন এমনি প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে স্বাবলম্বী ও আত্মনির্ভরশীল হতে পারে এই প্রত্যাশা থাকবে রেডিও সৈকতের।