দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই নারী। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধানে নারীর অধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করে তদানীন্তন সরকার নারী উন্নয়নকে অগ্রাধিকার প্রদান করেন। দেশে নারী উন্নয়নের লক্ষ্যকে সামনে রেখে নারী ও শিশুবিষয়ক একটি পৃথক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তবু নারীমুক্তির পথ আজও সুদূরপরাহত। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্যমতে, ২০২১ সালে ৩ হাজার ৭০৩ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন সবচেয়ে বেশি, ১ হাজার ২৩৫ জন। এছাড়া ১৪টি কন্যাশিশুসহ ৩৩ জন শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন। আর ৬২টি কন্যাশিশুসহ যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন ৯৫ জন। শারীরিক বা মানসিকভাবে প্রতিনিয়তই বেশিরভাগ স্ত্রী তার স্বামীর দ্বারা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছেন। কিন্তু এসব নির্যাতনের অনেক ঘটনাই থেকে যায় অন্তরালে । অধিকাংশই ধামাচাপা পড়ে যায়। মামলা-মোকদ্দমা না করে লোকলজ্জার ভয়ে গোপন রাখা হয় অনেক ঘটনা। যে কোনো মানুষের কাছেই পরিবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং আশা-ভরসার স্থল, নিরাপদ আশ্রয়। দিন শেষে সবাই পরিবারের কাছেই ফেরে। কেননা, এটাই শান্তির ঠিকানা। আর এই পারিবারিক পরিসরেই যদি কেউ নির্যাতনের শিকার হয়, তবে তা চরম বেদনাদায়ক। প্রীতিলতা অনুষ্ঠানটির জন্য আমরা গিয়েছিলাম কক্সবাজার জেলার নুুনিয়ার ছড়া এলাকায় । কথা বলি মিশু আক্তার নামে একজন নারীর সাথে। তিনি নুুনিয়ার ছড়া বাসুনিয়া পাড়া ১ নং ওয়ার্ড এর বাসিন্দা। ২০১৯ সালে তার বাল্যবিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য তিনি নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছিলেন। যৌতুকের জন্য গর্ভবতী অবস্থায়ও তার শাশুড়ী তাকে মারধর করেছে। অনেক সময় তিনি প্রতিবাদ করেছেন, ফলে অত্যাচারের মাত্রা আরো বেড়ে গেছে। বর্তমানে মিশু আক্তার বাবার বাড়িতে তার সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন। তার স্বামী ভরণপোষণের দায়িত্ব অস্বীকার করায় তিনি সেলাই ও ব্যাগ তৈরীর কাজ করে নিজের ও সন্তানের ব্যয় নির্বাহ করেন।
আর্থ-সামাজিক সূচকে দেশের যত অর্জন তার পেছনে দেশের নারীসমাজের অসামান্য অবদান আছে। কিন্তু দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলেও সামাজিক নানা ক্ষেত্রের মতই নারী অবস্থারও তেমন উন্নয়ন সম্ভব হয়নি। সংসারে, অর্থাৎ বাড়ির ভেতরে নারীদের অসহায়ত্বের মাত্রা কমছে না। এক্ষেত্রে নারী সুরক্ষার জন্য সমাজ ও রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকার নারী নির্যাতনের জন্য বলিষ্ঠ উদ্যোগ নেবে, এই কামনা থাকবে রেডিও সৈকতের ।