সৃজনা পালের তিন সন্তানই স্বাভাবিক নয়। প্রথম সন্তানের মানসিক সমস্যা রয়েছে, আর দুই ছেলে-মেয়ের বয়স ত্রিশ বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের মানসিক বৃদ্ধি শিশুকালের মতোই রয়ে গেছে। চলাফেরা থেকে শুরু করে দৈনন্দিন সব কাজেই তারা পুরোপুরি নির্ভরশীল অন্যের ওপর।
সন্তানদের জন্মের অল্প কিছুদিন পরই মৃত্যুবরণ করেন তাঁদের বাবা। তখনই সৃজনা পালের জীবনে নেমে আসে পাহাড়সম দায়িত্ব। একদিকে সংসার চালানো, অন্যদিকে বিশেষ যত্নের প্রয়োজন এমন তিন সন্তানের সার্বক্ষণিক দেখভাল সবকিছুই একা সামলাচ্ছেন তিনি।
প্রতিকূলতার পরও সৃজনা পাল ভেঙে পড়েননি। সন্তানদের সুস্থতার আশায় তিনি ছুটেছেন কক্সবাজারের বাইরে দেশের নামীদামী চিকিৎসকদের কাছে। অগণিত চেষ্টা, বিপুল অর্থ ব্যয়, ও দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা সব কিছুই করেছেন নিঃস্বার্থ মাতৃত্ববোধ থেকে। তাঁর এই নিরলস প্রচেষ্টা চোখে জল এনে দেয় যে কারও।
তবে, ভাগ্য যেন এক মুহূর্তের জন্যও তাঁর প্রতি সহানুভূতিশীল হয়নি। এত প্রচেষ্টা ও লড়াই সত্ত্বেও সন্তানদের অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। চিকিৎসকরা নিয়মিত পরামর্শ দিলেও বাস্তবে পরিস্থিতি আগের মতোই রয়ে গেছে। একা একজন নারীর পক্ষে মানসিক চাপ, শারীরিক পরিশ্রম এবং আর্থিক সংকট একসঙ্গে মোকাবিলা করা যে কতটা কঠিন, তা সহজে অনুমান করা যায় না।
সৃজনা পাল শুধু একজন মা নন, তিনি সাহস, ত্যাগ ও মমতার এক প্রতীক। নিজের ব্যক্তিগত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়ে সন্তানদের যত্নে জীবন উৎসর্গ করেছেন তিনি। প্রতিদিন তাঁর দিন কাটে একরাশ অনিশ্চয়তা আর সন্তানদের ভবিষ্যতের চিন্তায়। তবুও তিনি হাল ছাড়েননি। মায়ের মমতা, ধৈর্য ও দৃঢ় সংকল্প তাঁকে এখনো টিকিয়ে রেখেছে একজন অনুপ্রেরণাদায়ী নারী হিসেবে, যিনি প্রমাণ করেছেন “মায়ের ভালোবাসা সব বাধা জয় করতে পারে।”