নতুন জীবনের আগমনে প্রত্যাশা থাকে আনন্দের, স্বপ্নের, আর ভবিষ্যৎকে ঘিরে অনেক পরিকল্পনার। সেই স্বপ্ন নিয়েই মা হয়েছিলেন সাহিনা বেগম। কিন্তু বাস্তবের কঠিন পরীক্ষায় তাকে হতে হয়েছে আরও দৃঢ়, আরও সংগ্রামী। তিন সন্তানকে নিয়ে একটি সাধারণ পরিবারের দায়-দায়িত্ব সামলাতে সামলাতে তার জীবন আজ একটি অনন্য লড়াইয়ের গল্প বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন কন্যাকে সুস্থ করে তোলার এক অক্লান্ত প্রচেষ্টার গল্প।
মেয়ের জন্মের আগেই নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়েছিলেন তিনি। চিকিৎসকদের মতে সবকিছুই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু জন্মের কয়েক মাস পরই ধীরে ধীরে উপলব্ধি করেন তার সন্তান অন্য শিশুদের মতো আচরণ করছে না। সেই প্রথম উপলব্ধির মুহূর্ত থেকেই শুরু হয় তার অন্তহীন যুদ্ধ। মেয়ের চিকিৎসা, থেরাপি, প্রয়োজনীয় যত্ন সবকিছুই নিশ্চিত করতে তিনি শুরু করেন এক কঠিন পথচলা।
প্রথমদিকে পরিবারের সামান্য সঞ্চয় দিয়েই চলছিল চিকিৎসা। কিন্তু বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সন্তানের থেরাপি ও ওষুধের ব্যয় দ্রুতই বেড়ে যায়। পরিবারের সীমিত আয়ে তা বহন করা অসম্ভব হয়ে উঠতে থাকে। ঠিক তখনই দায়িত্ব আর মমতার শক্তিতে নতুন পথ খুঁজে নেন সাহিনা। রাতভর বসে ঝিনুক দিয়ে মালা তৈরি করে সামান্য আয়ের উৎস তৈরি করেন তিনি। দিনভর মেয়ের যত্ন, তারপর নিদ্রাহীন রাত এই দুইয়ের সমন্বয়ে কাঁটানো প্রতিটি দিন তার কাছে ছিল নতুন চ্যালেঞ্জ, কিন্তু থেমে যাননি তিনি।
সাহিনার পুরো সময়জুড়ে থাকে মেয়েকে ঘিরে নানা প্রয়োজন, যত্ন, থেরাপি ও চিকিৎসার পরিকল্পনা। নিজের জন্য কোনো সময় নেই, নেই বাহিরের পৃথিবী দেখার অবকাশ। তবুও ক্লান্তিহীন মনোবল নিয়ে তিনি লড়াই করে যান প্রতিটি দিন। সমাজের অনেকে যেখানে প্রতিবন্ধকতা দেখেন, সেখানে সাহিনা বেগম খুঁজে পান দায়িত্ব, শক্তি আর ভালোবাসার নতুন অর্থ।
আজ তার এই সংগ্রাম শুধু ব্যক্তিগত গল্প নয়; এটি সমাজের সামনে এক অনুপ্রেরণার প্রতীক। সাহিনা বেগম প্রমাণ করেছেন মায়ের ভালোবাসা পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী ভিত্তি। যত প্রতিকূলতাই আসুক, দৃঢ়তা আর সাহস থাকলে সব বাধা জয় করা সম্ভব।