নারীর প্রতি সহিংসতা বা নারীর বিরুদ্বে সহিংসতা হলো সহিংস অপারাধগুলো যা প্রধানত বা শুধুই নারী অথবা কিশোরীদের উপরেই করা হয়।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে নারীর জন্ম থেকে শুরু করে বৃদ্ব বয়স পর্যন্ত সকল পর্যায়ে নারীর প্রতি সহিংসতার বিভিন্ন ধরন নিয়ে বিশ্লেষণ করেছে। মহামারীর এই সময়ে বিশ্বে সহিংসতার শিকার হয়ে আগের তুলনায় ৫ গুন বেশি নারী হেল্পলাইন নাম্বারে ফোন করেছেন বলে ইউএন উইমেনের এক পরিসংখ্যানে জানা যায়। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর প্রধান ও পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ তাবারক উল্লাহ এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন,ফোন কলই বলছে মহামারীর এই সময়ে নারী নির্যাতনের হার বেশি।
নারী সহিংসতা বা নারী নির্যাতন বর্তমান সময়ে নিত্যদিনের ঘটনা। সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মহামারির মধ্যেও ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা বৃদ্বি পায় প্রায় ১৮ শতাংশ।
বিদায়ী বছরে দেশে লকডাউনকালে উল্লেখযোগ্য হারে নারীরা শারীরিক, মানসিক, যৌন ও অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অনেক নারী ও শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যার খবর এসেছে। স্কুল বন্ধ থাকায় বাল্যবিবাহও থেমে থাকেনি। বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন কয়েক দফা জরিপে জানায়, এমন অনেক নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছে যারা আগে কখনও নির্যাতনের শিকার হয়নি। নভেম্বরের শেষে দেশের ৫৯ জেলার ১০ লাখ নারীর অংশগ্রহণে করা এক জরিপে দেখা যায়, এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪০ হাজার নারী পারিবারিক সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। যাদের মধ্যে ৪০ শতাংশ নারী প্রথমবারের মতো নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
অপরাধবিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনার শুরুর দিকে সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও সব থমকে গিয়েছিল। অপরাধীরাও কিছুটা থমকে গিয়েছিল। কিন্তু এখন তারা আগের মতো সক্রিয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন, ‘নারীর প্রতি নির্যাতন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। কারণ, বড় একটা সময় আমরা নিজেরা নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত হয়েছিলাম। ফলে নারী যে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে সেদিকে নজর যায়নি। ভয়াবহ আরেকটি দিক যুক্ত হয়েছে এই নির্যাতনের সঙ্গে। সেটি হলো, এই সময়ে অপরাধের বিচার চেয়ে নারী সহসা বাইরেও যেতে পারেনি।